১.
গ্রামের রাস্তা থেকে মাঘের হাড়কাঁপানো শীতে কয়েকটা কুকুরের করুন সুরে কেঁদে উঠার ডাক শোনা যায় কেবল। রাস্তাটা বেশ উঁচু করে বাঁধা। রাস্তার দুধারে অগোছালো গাছগুলো যেন শীতে মাটির নিচে গা ঢাকা দিতে চাইছে। রাস্তার দুধারে বেশ খানিক পরপর বাড়িগুলো নিঃশব্দে দাড়িয়ে রয়েছে। কুকুরের ডাক ছাড়া আর কোন শব্দ নেই বললেই চলে। সবাই সকাল সকাল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। এমনিতেই গ্রামের মানুষগুলো দিনভর কায়িক পরিশ্রম করে, তাই বেশি রাত জাগে না। আবার ভোরে উঠার তাগিদও কাজ করে। তাছাড়া আজ শীত একটু বেশি হওয়ার কারনে সবাই আগে ভাগেই লেপ কাঁথার নিচে নিজেকে মুড়ে নিয়ছে। কিন্তু সজিব জেগে আছে। আজ যেন ঘুম তার কাছ থেকে ছুটি নিয়েছে। সজিবের সঙ্গে তার বাবাও বসে আছে। সজিবের বাবা শাহাদাত সাহেব সজিবকে বোঝাচ্ছেন নানা কথা। শান্তনা দিচ্ছেন নানাভাবে। বাবা বারবার বলছেন যেন শাহাদাত ঘুমিয় যায়, মন খারাপ না করে। কিন্তু সজিব ঘুমুতে যাচ্ছে না দেখে তিনিও একটু উঠে বসলেন আর সন্ধ্যা-বিকেলে ঘটে যাওয়া বিষয়টি নিয়ে সজিবকে ভালভাবে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলেন।
-বাবা, তুমি মন খারাপ করে থেকো না। ওরা তো মূর্খ তুমি তো নও।
-মুখ বুজে বসেই রইল সজিব।
-তোমার গায়ে হাত তুলেছে এই জন্য তোমার এত মন খারাপ সজিব? জীবনে হাজার আঘাত সহ্য করার জন্য তোমাকে তৈরি করেছি আমি! আর এখনি যদি তুমি এত মুষড়ে পড় তাহলে ভবিষ্যতে কি হবে তোমার। তোমার ভবিষ্যৎ চিন্তায় আমি শঙ্কিত হচ্ছি বাবা!
-না বাবা আমি সেই জন্য মন খারাপ করছি না। আমার এই জন্য খারাপ লাগছে যে, নিজের ভাষায় কথা বলছি আর বলব এই কথাগুলো বলার জন্য নিজের লোকে আমাকে আঘাত করলো! মন খারাপের কারন এইটাই বাবা।
-শোন, যারা তোমাকে আঘাত করেছে তারা তোমার ভাই। আসলে তারা তোমাকে আঘাত করেনি। তাদের দিয়ে তোমার মত হাজার হাজার মানুষকে আঘাত করানো হচ্ছে। আর তা করছে ঐ ক্ষমতালোভী পাগলের পাল।
-বাবা কাল শুনলাম ঐ পাড়ার কাকা বলল, 'আরবিতে হরফে হরফে দশ নেকি আর উর্দুতে ৫ নেকি; মুসলমান হিসেবে আমাদের হিন্দুদের এই বাংলা না, উর্দু কথা বলাই উত্তম' এটি কি সত্যি বাবা?
-তাহলে ১০ নেকি নেব। ৫ নেকি কেন নিতে যাব? শোন তোমাকে বলি, পবিত্র কোরানে সুরা আর-রহমানে আল্লাহ বলেছন, "আল্লামাহুল বায়ান" অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের বায়ান করতে বা কথা বলতে বা ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহ এই কথা বলেননি যে, আমি তোমাদের আরবি শিক্ষা দিয়েছি। তোমরা কেবল আরবি পাঠ কর নতুবা পাপ হবে। এমন কথা তিনি কোথাও বলেননি। আসলে বাবা শাসক গোষ্ঠীর পলিসি হল, শাসন করতে হলে তোমার চিন্তা চেতনা প্রজাদের উপর চাপিয়ে দাও তাহলে তুমি যেমন পারো তেমন করে তাদের চিন্তা করাতে পারবে খেলাতে পারবে হাসাতে পারবে। তাই তারা তাদের মতাবলম্বীদের সহযোগিতা করে বা তাদের মতে আসতে সহযোগিতা করে। অন্যদের করে না।
-তাহলে বাবা আরবি শিক্ষা কি বাধ্যতামূলক নয়?
-বাবা শোন, বড় হলে আরো বিস্তারিত জানতে পারবে। এখন সামান্য বলছি এই জেনে রাখো।উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিকের সময় যখন অনেক অঞ্চল মুসলিম অধিকারে আসল তখন তিনি "আরবীকরণ" নীতি চালু করেছিলেন। তারপর আসলে যত অঞ্চলেই মুসলিম আধিপত্য বাড়লো তাদের উপরেই ধর্মের নামে এই ভাষা চাপানো হয়েছিল। কারন ঐ আগের কথাটাই! শাসকের শাসনের সুবিধা। নাহলে শাসক প্রজাকে নিজের মত বোঝাতে পারবে না। ফলে শাসক ও শাসিতের মধ্যে একটা ফারাক তৈরি হবে আর ইবনে খালদুনের আসাবিয়া তত্ত্ব মতে রাজ্য টিকবে না। তাই যে কোন মতে আসাবিয়া তৈরি করতে চাই শাসক গোষ্ঠী। আসাবিয়া বা রক্ত সম্পর্ক না হলেও যেন একই ধর্ম সম্পর্ক থাকে প্রজাদের মধ্যে সেই চেষ্টাই তারা করেন। নতুবা গদি হারানো যেতে পারে যে! তবে তুমি ভাষা শেখ, হাজারটা ভাষা শেখ কোন অসুবিধা নেই। তবে মাতৃভাষার বিশেষত্ব হল এই যে, এটি স্থানীয় অঞ্চলের প্রভাবে বিশেষভাবে গঠিত হয়। এই ভাষা যদি ভৌগোলিক সীমা ছেড়ে অন্য অঞ্চলে প্রবেশ করে তাহলে অনেক সময় বিপত্তি ঘটে। আবার স্থানীয় উভয় মাতৃভাষা শিখতে পারলে বিপত্তি কাটানো যায়।
-বাবা তুমি এত কিছু কেন জানো? ওরা কি এগুলো জানে না? তুমি জানলে ওরা কেন জানে না?
-জানার জন্য মন প্রয়োজন বাবা। ওদের মন তো হটকারি মন, জানবে কিভাবে। তবে আগামীর বিশ্ব আরো জানবে আরো শৃঙ্খল হবে...
-তোমার ঘুম নষ্ট করলাম বাবা। তুমি ঘুমুতে যাও।
-মুসকি হাসি দিয়ে শাহাদাত সাহেব বললেন, আগামীর বিশ্ব তোমরা, তোমরা জানলেই বিশ্ব শৃঙ্খল হবে। একটু ঘুম নষ্ট হয়েও যদি বিশ্ব শৃঙ্খল হয় তাহলে আমার কোন দুঃখ নাই বাবা। আচ্চা তুমিও ঘুমিয়ে যাও...
শাহাদাত সাহেব ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালেন।
২.
সেদিন বিকাল ৪ টার পরে সজিব বাড়ি থেকে বের হয়ে খেলার মাঠের দিকে যেতে যেতে মুখে আওড়াচ্ছিল,
"অ, আ, ক, খ পড়ব সারাবেলা_
আলিফ, বে; পে, ছে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলা"
সজিব কারো কাছ থেকে শেখেনি। নিজেই অনেক কষ্টে এই দুই ছত্র বানিয়েছিল। আরো দু-তিন লাইন লেখার চেষ্টা করেনি তা নয়! কিন্তু কোন মতেই সুরের সাথে আর কিছু মেলাতে পারেনি। দু লাইন লিখে সজিব ভেবেছিল এগুলো আমি শেফালিকে শোনাবো। ও খুব বুদ্ধিমান মনে করবে আমাকে। আমার বাবার মত। কিন্তু বাবা কত বড় বড় কবিতা লেখেন, সজিব তা লিখতে পারলো না সেই জন্য একটু মনও খারাপ ছিল। পরে নিজেকে এই বোঝালো যে, 'সজিব তুমি ছোট তাই লিখেছোও ছোট, বড় হলে লেখাও বড় হবে'
সজিব বাড়ি থেকে বের হয়ে খেলার মাঠের দিকে গেল। আগে থেকেই অনেক মানুষ সেখানে খেলছিল। মাঘের শীত থেকে বাঁচতে অনেকেই মাঠে এসেছে রোদে পোহাতে। মানুষের দশটি মুখ একত্রে হওয়ার অর্থ এটাই যে সেখানে পক্ষে বিপক্ষে কথা চালচালি হবেই হবে।বাঙালী হলে তো কথায় নাই! রগচটা মানুষ থাকলে কথার বেড়া ভেঙে হাতাহাতির পর্যায়ে গড়িয়ে যাওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। পূর্ব থেকেই কথার বান চলছিল সেখানে। পশ্চিম পাকিস্তান সরকার নাকি দেশের রাষ্ট্র ভাষা উর্দু করবে তাই ছিল সেদিনকার হট টপিক। কেউ বলছিল বাংলা ভাষা সারাজীবন বলে আসছি এখন কেন উর্দু বলতে যাবো? বললে ওরা বলুক না, আমাদের বলা না বলাতে ওদের অত্ত জ্বলছে কেন?
যারা সরকারের নিমোক খাচ্ছে বা খাওয়ার সম্ভাবনা আছে তারা বলছে উর্দু হলে অসুবিধা কি? সাহেবদের মত আমরাও উর্দুতে কথা বলবো। আমরাও বলব, 'হামারা পাকিস্তানি, হামারা উর্দু মে বাত কারতা হায়, হামারা সাচ্চা পাকিস্তানি হায়'। উর্দু কথা না বলতে পারলে সাচ্চা পাকিস্তানি হওয়া যায় কি? তাছাড়া আরবি বর্ণের লেখা আছে, তাতে আমাদের ছোয়াবও হবে। সব মিলিয়ে ভালই তো খারাপ কিসের? যাদের মন নিচু সারা জীবন নিচু হয়েই থাকতে চাই তারা কেবল এর বিরোধিতা করবে।
কেউ বলছে হুম কথা ভালই বলেছে ইউসুফ। কেউ বলে হুম কিন্তু... কোন পাল্টা উত্তর দিতে পারে না। ইউসুফ নিজের বাকপটুতার জন্য মনে মনে নিজেকে ধন্যবাদ জানাল। কেউ কিছু বলছে না দেখে ইউসুফ আরো দীপ্ত গলায় নানা কথা বলে যেতে লাগল। সবাই তার কথা প্রতুত্তরে বলল, হুম হুম ঠিক। আবার কেউ বলে তাহলে এটা এমন কেন/ ওটা এমন কেন? ইত্যাদি প্রশ্ন করছিল আর ইউসুফ বিজ্ঞের মত একের পর এক টপাটপ করে প্রশ্নগুলো ধরে তার উত্তর সরলীকরণ করে নিজের পক্ষে জটিল সুত্রের মত করে জাল বুনিয়ে বুনিয়ে শ্রোতাদের ফেরত দিচ্ছিল। সবাই তো ইউসুফের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
এতক্ষণে সজিব তার কিছু খেলার সাথি আর বন্ধুদের নিয়ে তার লেখা ঐ কবিতার ছত্রগুলো শ্লোগানের মত করে বলতে বলতে এগিয়ে আসলো। ইউসুফ ও তার নব দীক্ষিত অনুসারীগন হুঁশে ছিল না। তারা পুরোটাই জোশে চলে গেছিল। এমতাবস্থায় তাদের বিপরীতে কথা বলা মানে তাদের অনুভূতিতে আঘাত হানা। এই আঘাতের জন্য তারা যে কাউকেই পাল্টা আঘাত করতে পারে! ইউসুফ হাঁক ছেড়ে বলল ঐ এই দিকে আয় তোরা। সজিব ভেবেছিল ভাই-রা যদি জানতে পারে যে তার লেখা কথা এগুলো; তাহলে সজিবকে ওরা বাহবা দিবে। তাই সে সিনা টান-টান করে গেছিল ওদের সামনে। বলেছিল জি ভাই বলেন।
-এই কথাগুলো কে শিখিয়েছে রে তোরে?
-কেউ না ভাই। আমি নিজেই লিখেছি কথাগুলো। ভাল হয়নি ভাই?
-ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল সজিবের গালে। সজিব কোন কিছু বোঝার আগেই ঘটে গেছিল ঘটনাটা। বলল, হুম ভাল না ছাই হয়েছে। এক দুদিনের ছেকরা তার মুখ কত বড় কথা... তুই ছোট মানুষ তুই এসবের কি বুঝিস রে? ইত্যাদি... ইত্যাদি...
সজিব কোন কিছু না বলেই মুখ বুজে চলে এসেছিল। আর এসে প্রচন্ড মন খারাপ করে বসেছিল। পড়তে বসছে না দেখে মা অনেক বার জিজ্ঞাসা করেছিল কি হয়েছে বাবা তোমার, পড়তে বসছো না কেন?
কোন উত্তর-ই করেনি সজিব। রাত্রে যখন বাবা বাসায় আসল তখন সব জেনে শুনে কেবল জিজ্ঞাসা করলেন বাবা সজিব তোমার কি হয়েছে? অমনি ঝরঝর করে চোখের জল গড়িয়ে পড়ল সজিবের। পরে বাবা তাকে বুঝিয়েছিল অনেক কথা। বাবার জ্ঞানে আলোকিত হয়েছিল ছোট্ট একটি মন।
৩.
গ্রামে একটা ছোটখাটো ঝামেলা তৈরি হয়েছিল সজিবের বিষয়টা নিয়ে। কিন্তু শাহাদাদ সাহেব এ বিষয়টা নিয়ে বেশি টানাহেঁচড়া করতে চাননি। তিনি বলেছিলেন ছেলেদের মধ্যে একটু-আধটু ঝগড়াঝাটি হয় এটিও তেমনি। কিন্তু তিনি ইউসুফের প্রোপাগাণ্ডার জবাব দিয়েছিলেন উপযুক্ত যুক্তিসহকারেই! তখন তার যুক্তি খন্ডণ করার কেউ ছিল না। নিরবে সবাই বাংলা ভাষার পক্ষাবলম্বনই করেছিল।
সজিবের গ্রামটা ঢাকা শহর থেকে খুব বেশি দূরে না। ঢাকার বড়সড় ঘটনার হালনাগাদ একটু সচেতন মানুষ সহজেই জানতে পারত। তারা জানতে পারল সরকারের বিভিন্ন ঘোষনার কথা নানা অত্যাচারের কথা। সজিব সেদিনের পর থেকে সব খবরাখবর আরো সঠিকভাবে নিতে চেষ্টা করত। পূর্বে বাবার আলোচনায় অংশ নিয়ে নানা কথা জানতে পারত এখন বিষয়টা তার একান্ত ব্যক্তিগত হয়ে গেছে। তাই সে খবরগুলো নিজের মত করে জানার চেষ্টা করে। বিশ্লেষণের চেষ্টা করে। প্রয়োজনে বাবার কাছে থেকে নানা প্রশ্ন করে জেনে নেয়।
ইতোমধ্যে শীতটা কমতে শুরু করেছে মাঘ মাস শেষ হয়ে গেছে ফাল্গুন মাস পড়েছে সবে। ঢাকায় ভাষা আন্দোলনের তালে তালে সজিবেরও একটি নিজস্ব তাল উঠল। সে ঢাকার রাজপথে গিয়ে আন্দোলনে যোগ দেবার জন্য উৎসাহী হয়ে উঠল। বাবাকে জানাল যে সে ঢাকাতে গিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে চাই। বাবা তাকে অনেক বুঝিয়ে বলল, দেখ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার মত বয়স এখনও তোমার হয়নি। তাছাড়া আমরা বিশ্বাস করি বাংলা আমাদের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হবেই হবে। পরবর্তী সময়ে বাংলা ভাষাকে আরো মজবুত স্থানে নিতে আমাদের পরিশ্রমী নাগরিক দরকার হবে। তুমি হবে ভাষা আন্দোলনের পরবর্তী ভাষাকে উন্নত স্থানে নেবার সৈনিক। তুমি এখন থেকে বুকের মধ্যে মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসা জমিয়ে রাখ। সেদিন তোমার প্রয়োজন হবে দেশের। প্রতিটি নাগরিকের প্রয়োজন দেশের। তবে তোমার মত দেশপ্রেমিকদের আরো বেশি প্রয়োজন।
সজিব কোন কথা, যুক্তি মানতে চাইছিল না। সে পাল্টা অনেক যুক্তি দেখিয়েছিল সেদিন। বাবা বুঝেছিল সেদিনই বাবা আমার বোঝার লায়েক হয়েছে। শেষমেশ বাবা সজিবকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
১৪৪ ধারা জারি হলে ঢাকার অবস্থা তখন টালমাটাল। ছাত্ররা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল তারা সবকিছু স্বত্বেও মিছিল করবে। ৮-ই ফাল্গুনে মিছিলে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ বাহিনী তাতে হতাহত হয় অনেক মানুষ। সজিব অনেক কেঁদেছিল সেদিন। তাকে সেদিন ইউসুফ থাপ্পড় মেরেছিল সেই জন্য সে কাঁদেনি, কেঁদেছিল বাবার আহ্লাদে। আজকের কাঁদাটা দুঃখের, কষ্টের এবং অনুভূতিতে চরম আঘাতের। শাসক বা শাসক গোত্রীয় কারো অনুভূতিতে আঘাত দিলে তারা শাসন করতে পারে নানাভাবে। কিন্তু শাসিতের অনুভূতিতে আঘাত দিলে চোখের পানি ফেলতে পারে বা নিরব দর্শকের ন্যায় ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়েই থাকতে পারে কেবল। রফিক, বরকত, সালাম আরো কতজন শহিদ হল সেদিন। শহিদ হল সজিবের মনও! এ হত্যাকান্ডের পর আন্দোলনের তীব্রতা আরো বেড়ে গেল। শাসক বাহিনী বাধ্য হয়ে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি মেনে নিল। সজিব সেদিন সারা গ্রামে ঘুরেছিল। যেন বিজয় মিছিল করছে সজিব। অত্যন্ত খুশিতে ভরা ছিল সজিবের মন। সজিবের বাবার আদেশে সব সুস্বাদু আর ভাল ভাল খাবার তৈরি হয়েছিল সেদিন। পারিবারিক অনুষ্ঠানের একপর্বে সজিব বাবার কাধে মাথা রেখে বলেছিল, 'বাবা একটি কবিতা লিখেছি শোনায়?'
-বাবা পরম স্নেহে বলল, হুম বল...
-সজিব আবৃত্তি করতে শুরু করল...
"ফাগুন মাসে আগুন জ্বলে বুকে,
অত্যাচারী সারাজীবন মরবে ধুকে ধুকে।
ওরা আমার মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চাই
কে বলবে ওদের ভাষা, ঠেকছে কি ভাই দায়?
মহান স্রষ্টা বোঝেন যদি সকল ভাষা খানি
তুমি কেন আওড়াচ্ছ ভাই উল্টাপাল্টা বাণী?
ফাগুন মাসে আগুন জ্বলে; আগুন জ্বলে বুকে
সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ুক পাকিস্তানীর মুখে।"
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
২১ ফেব্রুয়ারী (৮-ই ফাল্গুনে) ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য শহিদ হয়েছিলেন কিছু তাজা প্রাণ। সেই সময়ের প্রেক্ষাপট নিয়ে ঢাকার নিকটবর্তী জেলার নিভৃত গ্রামের একটি খন্ড চিত্র তুলে ধরেছি। যা ২১ শে ফেব্রুয়ারী তথা ভাষা আন্দোলনকে প্রতিনিধিত্ব করেছে।
০৪ নভেম্বর - ২০১৯
গল্প/কবিতা:
৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪